একটা সুরের গল্প – Satia Muntaha Nisha December 8, 2013

আজ আমি একটা গল্প বলব– একটা সুরের গল্প।

মা বলতেন, সেই ছোটবেলা থেকে, মানে এতটা ছোট যখনকার কথা কিনা আমার মনেই নেই। তো সেই ছোটবেলা থেকেই এই সুরটা আমার কানে আসলেই নাকি আমার চোখেমুখে অন্যরকম কিছু একটা ফুটে উঠত। আমি নাকি চোখ ঘুরিয়ে, মাথা নাড়িয়ে সুরটা কোথা থেকে আসছে খোঁজার চেষ্টা করতাম। সেটা কী কারণে হতো তা বলতে পারব না, কিন্তু যত বড় হতে থাকলাম, টানটা যেন আরও বাড়তে থাকল, গভীরতা যেন আরও গভীর হতে থাকল। মা মাঝে মাঝে জানতে চাইতেন, কিংবা মা ছাড়াও যারা আমার এই সুরের গল্পটা জানেন তারাও জানতে চেয়েছেন, কীসের কারণে আমার এরকম টান। সত্যি কথা বলতে কী, অনেক কারণই হয়তো বলেছি উত্তরে, এই এক সুরেই যেন আমি আমার অস্তিত্ব খুঁজে পাই, শোক, আনন্দ, গর্ব, অহংকার সবকিছুর এক অদ্ভুত শিহরণ খেলে যায় আমার মাঝে, সুরটা শুনলেই আমি থমকে যাই-ইত্যাদি ইত্যাদি……কিন্তু এত কারণের পরও যেন ঠিক সেই কারণটা বলতে পারিনি যেটা আমি হৃদয়ের গভীর থেকে অনুভব করি। হয়ত সেটা বলা যায় না, হয়ত সেটা শুধুই অনুভব করার ব্যাপার … হয়ত এ জন্যই বলে, সত্যিকারের ভালোবাসায় কোনো কারণ থাকে না!

আজ আমি একটা গল্প বলব– একটা সুরের গল্প।

ভাবতে ভালো লাগে, আমরা যখন বেড়ে উঠেছি, আমার শৈশব যখন কেবল জগতটাকে দেখতে শুরু করেছে তখনও যান্ত্রিকতার খটমটে আওয়াজ কিংবা অনুভূতিকে বাণিজ্যিক করে তোলার প্রতিযোগিতা আমাদের অনুভূতিগুলোকে গলা টিপে মেরে ফেলা শুরু করেনি। সেই রাত জেগে ফুলের তোড়া বানানো, রাত জেগে থেকে ভোরের অপেক্ষা, আলো না ফোটা ভোরে সেই প্রভাতফেরি, খালি পায়ে শিশির মেখে অদ্ভুত আবেগে সেই সুরটা মনে-গলায় ভাঁজতে ভাঁজতে অসম্ভব দৃপ্ততায় এগিয়ে যাওয়া …“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি?”

(পুনশ্চঃ ফেসবুক যখন ইউজ করা শুরু করি, তখন একদম প্রথম দিকে সাঈদ হাসান টিপু ভাইয়ের সাথে কানেক্টেড হই, একজন ভক্ত হিসেবেই, তার থেকেই শাওন মাহমুদ আপুর সাথে। মা আমাকে অনেকবার বলেছেন, আমি শাওন আপুকে এই কথাগুলো বলেছি কি না। আমি আপুকে বলতে পারিনি, আসলে বারবার মনে হয়েছে, লিখতে গিয়ে হয়ত ঠিকমতো গুছিয়ে লিখতে পারব না। কিন্তু মা মারা যাবার পর আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল কথাগুলো একটু লেখার চেষ্টা করি। না হলে হয়তো  কোনোদিন বলাই হবে না! সে থেকেই এই নগণ্য চেষ্টা। হৃদয়ের গভীর থেকে শ্রদ্ধা জানাই এই অমর সুরস্রষ্টা শহীদ বুদ্ধিজীবী শ্রদ্ধেয় আলতাফ মাহমুদ এর প্রতি।

অনেকে বলতে পারেন, লেখাটা ডিসেম্বরে কেন দিলাম, ফেব্রুয়ারিতে দিলে বেশি প্রাসঙ্গিক হতো। কিন্তু ওই যে বললাম, প্রাসঙ্গিকতার নামে আমি কিংবা আমার ভালোবাসাগুলো এখনও ঠিক “সিজনাল ভালোবাসা” হয়ে উঠতে পারেনি…! এখন আমাদের অনুভূতিগুলো বড্ড বেশি আয়োজন সর্বস্ব আর আয়োজনগুলো দিবস সর্বস্ব। কিন্তু আমার এই গল্পটা আমার অস্তিত্বের, বছরের প্রতিটা দিনের, প্রতিটা মুহূর্তের!!!)