বেশ ক বছর আগে ঢাকার কয়েকটি দুর্গবাড়ি শিরোনামে প্রচ্ছদকাহিনী করে সাপ্তাহিক বিচিত্রা বিজয় দিবসকে সামনে রেখে ডিসেম্বর মাসে একটা চমৎকার সংখ্যা করেছিল। সে সময় বিচিত্রার সম্পাদক ছিলেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত চৌধুরী । প্রচ্ছদকাহিনীতে ঢাকার যে কটি বাড়ির ঠিকানা ও সংক্ষিপ্ত বিবরন ছাপা হয়েছিল তার মধ্যে ছিল ৩৭০ আউটার সাকুলার রোড, রাজারবাগ, ঢাকা-১, পূর্ব পাকিস্তান ঠিকানার বাড়িটি । প্রচ্ছদকাহিনীর সঙ্গে শিল্পী রফিকুন নবীর করা বাড়িটির একটা নিখুত স্কেচও ছাপা হয়েছিল । বলাবাহুল্য, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ওই বাড়িতেই ছিল আমাদের বসবাস ।
বাড়িটি সর্ম্পকে কিছু বলার আগে অবস্থান সর্ম্পকে পাঠকদের একটা সম্যক ধারনা দেওয়া প্রয়োজন মনে করছি । বাড়িটির ঠিক দক্ষিন দিকে অর্থাৎ ঠিক বিপরীতে আশি ফুট রাস্তার অপর প্রান্তে রাজারবাগ পুলিশ লাইন । পশ্চিমে মালিবাগ মোড়, পুবে শাহজাহানপুর । বাড়িটির চারপাশে যারা থাকতেন তাদের মধ্যে পুবের দেয়াল ঘেঁষে বিশিষ্ট শিক্ষক এবং স্বনামখ্যাত সাহিত্যিক শওকত ওসমান, তার কয়েকটি বাড়ি পরে সাহিত্যিক আবুজাফর শামসুদ্দিন । দক্ষিণ পূর্ব কোন ঘেষে ছায়ানীড় বাসভবনে লুৎফর রহমান যার স্ত্রী কবি গোলাম মোস্তফার বড় মেয়ে । অধুনা মঞ্চ ও টিভির খ্যাতনামা শিল্পী নিমা রহমানের বাবা-মা । বাড়ির পেছনে দিকটায় দি ইঞ্জিনিয়ার্স কোম্পানি লিমিটেডের মালিক আবদুল মান্নান । পশ্চিম দিকে থাকতেন আওয়ামী আমলের খাদ্যমন্ত্রী আবদুল মোমেন এবং সেক্রেটারি শামসুদ্দিন আহমেদ । উত্তর – পূর্ব কোনে বাড়ির মালিক বাকী সাহেব ।
স্বনামধন্য শিক্ষক রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ভাষাসৈনিক অজিত কুমার গুহ সে সময় আমাদের পরিবারে অভিভাবকরুপে দেবতুল্য আর অন্যদিকে আমাদের পরিবারের আরেক সুহৃদ কবি বেগম সুফিয়া কামাল কে আমরা খালাম্মারূপইে গন্য করি । এদের দুজনের একান্ত প্রচেষ্টায় আমার বড় বোন ঝিনু বিল্লাহ এবং সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ও ভাষাসৈনিক আলতাফ মাহমুদের বিয়ে সম্পন্ন হয় । ১৯৬৬ সালে আলতাফ ঝিনুর বিয়ে হওয়ার পর স্বভাবত আলতাফ মাহমুদ আমাদের পরিবারের একজন, সবার প্রিয় আলতু হয়ে গেলেন ।
আলতাফ মাহমুদ সে সময় নানা ধরনের সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন । চলচ্চিত্র সঙ্গীত পরিচালক হয়ে জীবিকা বেছে নেওয়ার পর ব্যস্ততা আরো বেড়ে যায় । বেশির ভাগ সময় অনেক রাত পর্যন্ত রিহার্সেল এবং রেকর্ডিং হওয়ার কারনে বাসায় ফেরা হতো না । সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার কারনে তাকে প্রায়ই ঢাকার বাইরে যেতে হতো । সব কর্মকান্ডে সদ্যসংসারী আলতাফ মাহমুদের আবার স্ত্রী ঝিনুকে পাশে রাখা চাই । তাছাড়া তার নিকট আত্নীয় পরিজনের সবাই থাকতেন বরিশালে । এমতবস্থায় মা এবং ভাইয়ের অনুরোধে আলতাফ ভাই আমাদের পরিবারে একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন । ১৯৬৭ সালের প্রথম দিকে আলতাফ ভাইসহ আমরা র্যাঙ্কিন স্ট্রিটের বাড়ি ছেড়ে রাজারবাগের এই ৩৭০ নম্বর বাড়িতে এসে উঠি । সেই দিন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালে পাক – হানাদার বাহিনীর হাতে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া র্পযন্ত আলতাফ মাহমুদ আমাদের পরিবারের সঙ্গে এই বাড়িতেই ছিলেন ।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতের ভয়াবহ বিভীষিকার কথা বাঙালি মাত্রই জানার কথা । রাজারবাগ পুলিশ লাইনের বাঙালী পুলিশ ভাইদের ওপর যে বর্বরোচিত আক্রমন হয়েছিল সে রাতে, তা আলতাফ ভাইসহ আমরা সবাই ওই ৩৭০ নম্বরের বাড়ি থেকে প্রত্যক্ষ করেছি । এ বর্বর পৈশাচিক কালরাতের ঘটনা ঐতিহাসিক ভাবে সে সময়ের সাক্ষ্য দেবে। শক্তিশালী জঙ্গি পাকিস্তানী সৈন্য আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ট্যাংক বাজুকা আর স্বয়ংক্রিয় মেশিনগানের আক্রমনের মুখে বাঙালী পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের রক্ষা করার জন্য চেষ্টা চালায় অত্যন্ত ঋজুভাবে । পরে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছিল, ভয়াবহ যুদ্ধ সে রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনেই হয়েছিল । এখনো স্পষ্ট মনে আছে, রাত ১০ টার পর আমাদের বাড়ির ছাদসহ পাড়ার সব বড় দালান এবং বড় গাছের ওপর বসে পুলিশদের প্রতিরোধের দৃঢ়সংকল্প । সমস্ত ছাউনি জ্বলে যাওয়ার পরও বসে পুলিশরা শুধু থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে শেষ র্পযন্ত যুদ্ধ করেছিল । শেষ রাতের দিকে পুলিশের ড্রেস বদলিয়ে লুঙ্গি – পায়জামা যা পেয়েছিল তা পরে পেছনের ডোবায় এবং ছাদে রাইফেল ফেলে দিয়ে আত্নগোপন করেছিল এবং পরে অন্যদের সঙ্গে তারা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন । সে সময় আলতাফ ভাই সাহসিকতার দৃষ্টান্ত্ম রেখেছিলেন । এ রকম ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও আলতাফ ভাই ছাদে ফেলে যাওয়া রাইফেল ও পুলিশের পোশাকগুলো চটের ছালায় ভরে কারফিউর মধ্যে রাতের অন্ধকারে সরিয়ে ফেলতে পেরেছিলেন । সে রাতের লোহমর্ষক বিভীষিকার বিস্ত্মারিত বিবরণ দিতে গেলে লেখা অন্যদিকে চলে যাবে, তবে এটুকু বলা যেতে পারে সে দিন আমরা সবাই বেঁচে গিয়েছিলাম অলৌকিকভাবে ।
২৫ মার্চের ঘটনার পর পাকিস্তান সরকার ঢাকায় ২৬ ও ২৭ মার্চ কারফিউ জারি করেছিল । আমাদের বাড়িটি রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পাশে থাকার কারণে আবার আক্রমণ অথবা পাকিস্তানী সৈন্যরা তল্লাসি চালাতে পারে – এ আশস্কায় কমলাপুর বৌদ্ধ মন্দিরের অনুরোধে আলতাফ ভাইসহ আমরা সবাই কিছুদিনের জন্য ওদের মন্দির নিরাপদ ভেবে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলাম । কিছুদিন থাকার পর পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলে আমরা সবাই আবার রাজারবাগের বাড়িতে ফিরে আসি । আমরা পাঁচ ভাই এবং তিন বোন । বড় দুভাই ছাড়া আর সবাই সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় জড়িত এবং এরই মাঝে লিনু, মিনু এবং শিমুল বিল্লাহ বেশ জনপ্রিয় শিল্পী হিসেবে নাম কুড়িয়েছে । সে সুবাদে স্বভাবত বাসায় বন্ধুদের বিরাট একটা সমাগম লেগে থাকত । একদিকে নাচ, গান, যন্ত্রসঙ্গীত ও নাটকের রিহার্সেল আর অন্যদিকে আলতাফ মাহমুদের দল – সবকিছু মিলে বাড়িটি সব সময় কলমুখরিত তালে ঝংকৃত হতে থাকত । ২৫ মার্চের কালরাতের পর বাড়িটি কিছুদিনের জন্য নিথর থমথমে স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল কিন্তু খুব বেশি সময় নেয়নি তার পুরনো রূপ ফিরে পেতে । কিছুদিনের মধ্যেই ৩৭০ আঃ সাঃ রাজারবাগ বাড়িটি আবার কলতানে মুখরিত হতে থাকল ।
২৫ মার্চের কালরাতের পর আলতাফ মাহমুদ ভীষন বিচলিত হয়ে পড়েন । হানাদার পাকসেনারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে নিরীহ বাঙালী নিধনের যে পৈশাচিক যজ্ঞ শুরু করেছিল, তার চাক্ষুষ সাক্ষী তিনি । অগুনতি আহত বাঙালি পুলিশকে নিরাপদ আশ্রয়ে তিনি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন । সিক্ত হতে দেখলেন দেশের পবিত্র মাটি । এসব ঘটনা তাকে বেশ বিচলিত ও আলোড়িত করল, তিনি দেশপ্রেমের নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে উদ্দীপ্ত হতে থাকলেন ।
সবকিছু ওলটপালট, কোনো বাধাধরা নিয়মের মধ্যে নেই, অগোছালো আলতু (পারিবারিক নাম) যদিও সব সময় এ ধরনের জীবনযাপন করে এসেছেন, ২৫ মার্চের পর ওর ব্যস্ততা আরো বেড়ে গেল । কী করে, কোথায় যায় তার হদিস মেলে না । এর মধ্যে ঘনিষ্ঠ কয়েকজন যেমন আবদুল লতিফ (গণসঙ্গীত শিল্পী) হাফিজ ভাই (যন্ত্রশিল্পী, পরবর্তীকালে শহীদ) আতিকুল ইসলাম (রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী) আমানুল হক(নৃত্যশিল্পী) প্রমুখ বাসায় এলে দরোজা বন্ধ করে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতেন । কোলকাতা থেকে প্রকাশিত পরিচয় পত্রিকার বর্ষ ৪১ সংখ্যা ৬-৭ পৌষ- মাঘ ১৩৭৮ দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখিত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো র্শীষক নিবন্ধে সারা আরা মাহমুদ (ঝিনু) এভাবে বলেন :
বাড়িতে কে কখন আসে, কেন আসে আমি প্রায় জানতাম না । বুঝতাম কিছু একট হচ্ছে । তবে ঠিক ব্যাপারটার আন্দাজ পেতাম না, পেতে চাইতাম না । কিন্তু একটা ব্যাপার লক্ষ করতাম । হাফিজ ভাই এসে হর্ন দিলে উনি যে অবস্থায়ই থাকুন না কেন দৌড়ে বেরিয়ে যেতেন । গেটের পাশে কাঠাল গাছের তলায় দাড়িয়ে দুজন কথা বলতেন ……..কেউ জানে না, লতিফ ভাই আমাদের বাড়ি বসেই গান লিখতেন, বলতেন – সুর দেওয়া হলেই ছিড়ে ফেলবে । ঐ সময়টা যেন আচ্ছন্নের মতো কাটিয়েছেন । দরজা জানালা বন্ধ করে ঘরের মধ্যে একা বসে সুর দিতেন । হয়তো খুব কষ্ট পেয়েছেন, গলা খুলে গাইতে পারছেন না তো? আর বাড়িতে যারা থাকে বা নিয়মিত আসে তাদেরও জানতে দিতে চান না । এভাবে কি সুর হয় বলুন ? উজ্জ্বল চোখে প্রসন্ন মুখে হেসে সারা বলতে লাগলেন, কিন্তু সুর উনি দিয়েছিলেন । সেই কবিতাগুলো কোথায়? সুর দেওয়া মাত্রই ছিড়ে ফেলেছেন, কোনো কপি নেই । বিষন্ন চোখে তাকিয়ে সারা মাহমুদ আস্তে আস্তে ঘাড় নাড়লেন, বললেন, হ্যা টেপ করতে পেরেছিলেন । হ্যান্ডস জোগার করতেন হাফিজ ভাই আর রাজা হোসেন খান । আলতাফ নিজের গাড়িতে ঘুরে ঘুরে শিল্পী জোগাড় করতেন। বেঙ্গল স্টুডিও আর ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন স্টুডিওর কোনো একটায় রিহার্সেল আর রেকর্ডিং হতো………..রেকর্ড করে সবাইকে বাড়ি পৌছে দিয়ে রাত তিনটা নাগাদ বাড়ি ফিরতেন ।
প্রথমদিকে ১২ খানা গানের একটা স্পুল নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করার জন্য যার হাতে দেয়া হয়েছিল তিনি ধরা পড়ে যান । সেই স্পুলটি আর পাওয়া যায়নি । গনসঙ্গীতের এই স্পুলটি হারিয়ে যাওয়ার পর আলতাফ মাহমুদকে আরো চিন্ত্মিত এবং উদ্ধিগ্ন মনে হতো । এই ঘটনাটি আলতাফ ভাইয়ের খুব কাছের বন্ধু এবং আমাদের পরিবারের কয়েকজন ছাড়া আর কেউ জানতে পারেনি সে সময় । ১৯৭১ সালের জুন মাসে আমার সেজ ভাই মেওয়া এবং মেজ বোন মিনু আগরতলা মেলাঘর এ চলে গিয়ে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে । মিনু বাংলাদেশ হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করত । সে সময় বেগম সুফিয়া কামালের দুই মেয়ে লুলু এবং টুলুও একই হাসপাতালে যোগদান করে । মিনুকে কেন মেলাঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো তার পেছনে একটা ছোট ঘটনা আছে, তার উল্লেখ করছি :
মিনু তখন বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে নাচের প্রশিক্ষন শেষ করে বাবু রাম সিংয়ের কাছে উচ্চতর নাচের প্রশিক্ষন নিচ্ছিল । সে সময় বাফার একটা নাচের দল ছিল । নাচের ওই দলকে সংগঠিত করেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী আতিকুল ইসলাম । সে আমলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্যামা, চিত্রাঙ্গদা, তাসের দেশ, কবি জসীমউদ্দিনের বেদের মেয়ে আলতাফ মাহমুদের সুরারোপিত এবং ড. এনামুল হক রচিত হাজার তারের বীণা, রাজপথ জনপদ নৃত্যনাট্য মঞ্চায়ন করে বুলবুল ললিতকলা একাডেমি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বেশ আলোড়ন তুলেছিল। মিনু এসব নৃত্যনাট্য ছাড়াও পাকিস্তান সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হয়ে পৃথিবীর বেশ কটি দেশ ভ্রমন করেছে সে সময় । যাক সেসব কথা, এবার মূল ঘটনায় ফিসে আসি – একদিন সকাল বেলা বেশ হন্তদন্ত হয়ে আতিক ভাই বাসায় ছুটে এলেন । অনেক সময় ধরে আলতাফ ভাইয়ের সঙ্গে দরজা বন্ধ করে গোপনে কথা বললেন । ওদের ভাবসাব দেখে বাসার অন্য সবাই বেশ দ্বিধাগ্রস্ত, আলতাফ ভাই আমার বড় ভাই নূহেল বিল্লার সঙ্গে সলাপরামর্শ করে ওরা তিনজন মিলে মিনুকে নিয়ে তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে পড়লেন । এত দ্রুত ঘটনা ঘটছে তা বোঝার এবং জানার সময় কেউই পেল না । দুপুরের দিকে ওরা তিনজন ফিরে এল । গাড়ি থেকে আলতু মিনুকে কোলে তুলে এনে বিছানায় শুইয়ে দিলেন । মিনুর ডান পায়ে সাদা ধবধবে প্লাস্টার করা । মনে হলো মিনু অ্যাক্সিডেন্ট করে পা ভেঙ্গে ফেলেছে । মিনুর এ অবস্থা দেখে বাসার সবাই বেশ আতঙ্কিত – মা আলতু, আতিক ভাই এবং বড় ভাইয়ের কাছে আর্তনাদ করে জিজ্ঞাসা করে কোনো সঠিক উত্তর পাচ্ছিলেন না । হঠাৎ আলতু অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন । সবাই হতবাক বিস্ময়ে আলতুর দিকে চেয়ে রইল । আলতু হাসতে হাসতে বলছেন, মা মিনুর কিছুই হয়নি – শালাদের চোখে ধুলা দিলাম । সকাল বেলা আতিক ভাই খবর নিয়ে এসেছেন মিনুকে দিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নাচের অনুষ্ঠান করাবে, বাফার নাচের শিল্পীদের ঠিকানা নিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে পাকসেনারা । পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বহু নতুন সৈন্য এসেছে, ওদের মনোরঞ্জন করানোর জন্য নাচের শিল্পী খুঁজছে । পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নামিদামি গায়ক-গায়িকা এসেছে যাদের মধ্যে গজল সম্রাট মেহেদী হাসান ও কোকিলকণ্ঠী নূরজাহানও রয়েছেন । তাছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য সেনা ছাউনিতে স্থানীয় শিল্পীদের দিয়ে মনোরঞ্জন করা হচ্ছে । আজ সকালে বাফার শিল্পীদের ঠিকানা নিয়ে গেছে, সেখানে মিনুর ঠিকানাও রয়েছে । ওকে যাতে কোনো অনুষ্ঠানে যেতে না হয় সেজন্য ওর পায়ে নকল সিমেন্ট প্লাস্টার করে রাখা হয়েছে । এতক্ষণে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল- যাক মিনুর তবে কিছুই হয়নি ! সবচেয়ে মজার ঘটনা সেদিন সন্ধ্যায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন এসেছিল মিনুর খোঁজে । ওর ওই সাদা প্লাস্টার করা পায়ের অবস্থা দেখে ক্যাপ্টেনটি সমবেদনা জানিয়ে বিমর্ষ মনে ফিরে গিয়েছিল । এ ঘটনার কিছুদিন পর মিনুকে মেলাঘর পাঠিয়ে দেওয়া হলো । অবস্থা ধীরে ধীরে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে থাকল । গান-বাজনা-আড্ডা সবই হতে লাগল কিন্তু আর বাড়িটিতে নতুন অতিথির ভিড় দেখা গেল । কলাওয়ালা, শাকসবজি, খবরের কাগজ বিক্রেতা, ফেরিওয়ালাদের আনাগোনা বেড়ে গেল । এ ফেরিওয়ালাদের কারো কারো সঙ্গে আলতাফ ভাই অনেক সময় ধরে কথা বলতেন । অনেক সময় বাসার পেছনে ডেকে নিয়ে কথা বলতে দেখেছি । কিছুদিন পর টের পেলাম বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা ছদ্মবেশে ফেরিওয়ালা এবং ভিক্ষুকের বেশে ঢাকার খবর নিতে এসেছে । ওরা ঢাকার খবর বয়ে নিয়ে সীমান্তের ওপারে মেলাঘরে পৌঁছে দিত । কিছুদিন পর এ ফেরিওয়ালাদের মাধ্যমে চিঠিপত্র, নানা ধরনের লিফলেট ‘চরমপত্র’ জাতীয় কাগজ চলে আসত আলতাফ ভাইয়ের কাছে । পরে আমরা কয়েক ভাই এ চিঠিপত্র এবং লিফলেট বাজারের থলের ভেতরে করে অথবা খুব সাবধানে লুকিয়ে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে আসতাম । এসব ফেরিওয়ালা এবং ভিক্ষুকের মাধ্যমে কিছু কিছু হাল্কা গোলাবারুদও আসা শুরু হলো আলতাফ ভাইয়ের কাছে । এভাবে ধীরে ধীরে ৩৭০ নম্বর বাড়িটি দুর্গে পরিণত হতে থাকল । এসব গোলাবারুদ দিয়ে ঢাকার কেন্দ্রস্থলে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের অপারেশেন চালানো হয় । তারিখটি সঠিক বলতে পারছি না, তবে ঢাকায় গেরিলা আক্রমনের সূচনা হয়েছিল মতিঝিল এলাকায় পাকিস্তান স্টেট ব্যাংক লক্ষ করে । আলতাফ ভাইয়ের সহযোগিতায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী হাফিজ ভাইয়ের গ্রেনেড নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে । মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকা শহরে গেরিলাদের আক্রমন ছিল সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ । পাকিস্তান সরকার ঢাকাকে স্বাভাবিক রাখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় সেনা ছাউনি করে চেকপোস্ট বসিয়ে নিজ দেশে এবং প্রবাসে নির্লজ্জ ভাবে রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র এবং বিদেশী মিশনের মাধমে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রনে বলে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছিল । অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের খবর আন্ত্মর্জাতিকভাবে প্রচারের সর্বোত্তম স্থান হিসেবে মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা শহরকে গেরিলা আক্রমনের প্রধান টার্গেট করেছিল । এই বিচ্ছুরা ভালো করেই জানত ঢাকার যেকোনো একটা যুদ্ধের খবর ত্বরিত গতিতে বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, আকাশ বানী, রাশিয়া, চীন, জার্মানি- সর্বত্র প্রচারিত হবে এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধ জীবিত আছে তা প্রমানিত হবে । ঢাকা শহরে গেরিলা আক্রমন করার জন্য ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ এবং কমান্ডার মেজর হায়দারের নেতৃত্বে ছাত্র এবং যুবকদের নিয়ে বেশ কয়েকটি গ্রুপ করা হয় । এর মধ্যে ঢাকা শহরে অবস্থিত কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-যুবাদের নিয়ে একটি গ্রুপ করা হয় যার নাম ছিল ‘ক্র্যাক প্লাটুন’।-পাকসেনাদের চেকপোস্টে হানা দিয়ে নয়জন হানাদার বাহিনীর সদস্যকে নিধন, পাকিস্তান সরকারকে নির্লজ্জভাবে সমর্থন দেওয়ার কারনে ঢাকার আমেরিকান তথ্যকেন্দ্রে বোমা হামলা, ডিআইটি ভবন অর্থাৎ পাকিস্তান টেলিভিশন, ওয়াপদা ভবন, আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়ের পাশে সেনাপোস্টে বোমা হামলা এবং বিভিন্ন সময়ে বড় বড় ইলেকট্রিক ট্রান্সফরমার উড়িয়ে দিয়ে ঢাকা শহরকে যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরে পরিণত করে সমগ্র বিশ্বে মুক্তিযুদ্ধের খবর পৌঁছে দিয়েছিল এই ক্র্যাক প্লাটুনের দামাল ছেলেরা । সে সময় আগরতলা মেলাঘর এবং অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের ঢাকা শহরে যে কয়েকটি আস্তানা বা অস্ত্রাগার ছিল তার মধ্যে ৩৭০ নম্বর বাড়িটি অন্যতম । ১৯৭১-এর আগস্ট মাসের মাঝামাঝি আমেরিকা থেকে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি ভারত এবং পাকিস্তান সফর করার কথা । একই সময়ে জাতিসংঘের প্রতিনিধি হয়ে প্রিন্স সদরুদ্দীন আগা খান বিদেশী দল নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকা সফর করে পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিরীক্ষন করবেন । মেলাঘর থেকে কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের নির্দেশ এল, বিদেশী অতিথি থাকাবস্থায় ঢাকায় বড় ধরনের অপারেশন চালাতে হবে । বিশ্বকে জানিয়ে দিতে হবে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙ্গালিরা গেরিলা যুদ্ধ করে যাচ্ছে দেশ স্বাধীন করার ব্রত নিয়ে । এটাই সব চেয়ে মোক্ষম সময় । এ খবর চলে এল আলতাফ মাহমুদ এবং তার সহযোদ্ধাদের কাছে । কেনেডি এবং বিদেশী প্রতিনিধি দল পূর্ব পাকিস্তান সফর করার সময় ঢাকা ইনটারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অবস্থান করার কথা । তাই ওই হোটেল এবং আশপাশএলাকায় অপারেশন চালাতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো । ক্র্যাক প্লাটুনের অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা সামাদ ভাই নিয়ন সাইনের ব্যবসা করেন । ঘটনাচক্রে ঠিক ওই সময় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে নিয়ন সাইনের একটি কণ্ট্রাক্ট চলে আসে । আলতাফ ভাই, হাফিজ ভাই, সামাদ ভাই প্রমুখ মিলে সিদ্ধান্ত নেন, কেনেডি ঢাকা থাকাবস্থায় হোটেলে বোমা বিস্ফোরন ঘটানো হবে । যে কথা সে কাজ । কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা কাজের লোক সেজে নিয়ন বাল্বের ভেতরে বিস্ফোরক ভরে হোটেলের অভ্যন্তরে পাচার করে দিল । পাকসেনাদের কঠোর নিরাপত্তার চোখে ধুলা দিয়ে এ দুঃসাহসিক কাজ সম্পন্ন করা হয় । সময়মতো বিস্ফোরকের সাহায্যে বোমা ফাটানোর সব ঠিক হয়ে গেল । এখন শুধু কেনেডি এবং বিদেশী প্রতিনিধি দলের আগমনের অপেক্ষা । কিন্তু বিধি বাম! কেনেডি ভারত সফর করে পশ্চিম বাংলায় পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা ১ কোটি শরনার্থীর মানবেতর জীবনযাপনের চিত্র দেখে বেশ ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারলেন পূর্ব পাকিস্তানে কী ঘটছে । কেনেডি পাকস্তিান সরকারের আমন্ত্রণ বাতিল করে ভারত থেকে সরাসরি দেশে ফিরে গেলেন । তবুও সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইন্টরকন্টিনেন্টালে বিরাট বিস্ফোরন ঘাটানো হলো । ওই হোটেলে বহু বিদেশী সাংবাদিক এবং অতিথি থাকার কারনে এ বিস্ফোরনের খবর বিশ্বব্যাপী প্রচার হয়েছিল তখন । বোমা বিস্ফোরনের এ ঘটনা মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল আরো দৃঢ় এবং তাদের দুর্জয় শার্দূলে পরিণত করতে সাহায্য করেছিল । একই সময় ওরা শাহবাগে রেডিও পাকিস্তান কেন্দ্রের সামনে ছয়টি গ্রেনেড নিক্ষপে করে একাধিক পাকসেনা জখম করে । এ ধরনের বেশ কয়েকটি আক্রমনের মুখে পাকসেনাদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ে । দুর্ধর্ষ বলে কথিত পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধা অর্থাৎ ‘মুক্তি’র ভয়ে কুপোকাত! একটা বিরাট বিপদ হয়ে গেল । ওদের প্লানমতো কাজ হলো না বলে প্রচুর গোলাবারুদ বেঁচে গেল । এই গোলাবারুদ কোথায় রাখবে, কোথায় পাচার হবে? এ গুরুদায়িত্ব কেউই নিতে চাইল না । বিরাট সমস্যা, এ বিপুল অস্ত্র বাইরে ফেলে দেওয়া চলবে না, কারণ অনেক কষ্ট করে এ অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছে । তখন আলতাফ মাহমুদ সবাইকে আশ্বস্ত করে বললেন – চিন্ত্মার কারণ নেই, এসব গোলাবারুদ অস্ত্র আমার বাসায় রাখা যাবে । কথামতো রাতের অন্ধকারে ওর আলতাফ ভাইয়ের অস্টিন ক্যামব্রিজ গাড়ির পেছনে ভরে সব অস্ত্র জমা করলেন ৩৭০ নম্বর বাড়িটিতে । অনকে রাত অবধি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আমরা পাঁচ ভাই, সামাদ ভাই, হাফিজ ভাই, পাশের বাসার টুকু ভাই, নাসের ভাই প্রমুখ মিলে অস্ত্রগুলো কাঠাল গাছের নিচে রাখলাম । অস্ত্রগুলোর ওপরে ভাঙা ইট, বালু এবং ভাঙা কাঠ দিয়ে ঢেকে রাখা হলো যেন কেউ বুঝতে না পারে । তার কিছুদিন পর আমার চার ভাই, আমাদের প্রাণপ্রিয় আলতু এবং আবুল বারেক আলভি (ঢাকা আর্ট কলেজের অধ্যাপক) অস্ত্রসহ ধরা পড়েছিলাম, সেই বাড়ি থেকে। আলভি সে দিন আগরতলা মেলাঘর থেকে খবর নিয়ে এসেছে, মিনু এবং মেজ ভাই ভালোভাবে পৌছে গেছে এবং আলতাফ মাহমুদ যেন দেরি না করে অতিসত্বর মেলাঘরে চলে যান । সে দিন অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় মা এবং আলতাফ ভাইয়ের অনুরোধে আলভি বাসায় থেকে গিয়েছিল । সে দিনই সন্ধ্যায় সামাদ ভাই ধরা পরে যান এবং প্রচন্ড নির্যাতনের মুখে সব বলে দেন । ৩১ আগস্ট সকাল বেলা সমগ্র বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে পাকসেনারা । এই সামাদ ভাই, আলতাফ ভাইসহ সবাইকে শনাক্ত করেন এবং লুকিয়ে রাখা অস্ত্রের সন্ধান দেন । এর পরের ঘটনার সময় সুযোগ হলে লিপিবদ্ধ করব । বর্বর পাকিস্তানী সেনা ছাউনির জেলে কিছুদিন দুঃসহ নির্যাতন ভোগ করে যখন ফিরে এলাম, মনে হলো আমাদের দ্বিতীয় জন্ম হলো! আমরা চার ভাই এবং আলভি মার কোলে ফিরে এলাম কিন্তু ‘আলতু’ ফিরে এল না । এখনো আমার আদরের বোনটি ওই মানুষটির জন্য অপক্ষো করছেন- হয়তো আজীবন করবেন।
পুনশ্চ : ১৯৮৬ সালের ২৪ অক্টোবর আমার মা মারা যান । আমার মাকে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম তাঁর ‘একাত্তরের দিনগুলি’ বইতে ‘রাঙা মা’ বলে অভিহিত করেন । সেদিন ঢাকার অনেক মুক্তিযোদ্ধা এসে মাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে গিয়েছিলেন । বনানী গোরস্থানে মাকে দাফন সেরে মোনাজাত করে যখন সবাই বাড়ি ফিরছিলাম, তখন হঠাৎ ১৮ বছরের শাওন চিৎকার করে প্রথম ওর বাবার কথা বলল । চিৎকার করে আমার বড় ভাইকে শাওন বলেছিল, ‘তোমার মার একটা কবর আছে, জায়গা আছে – আমার বাবার কবর কোথায়?’ শাহাদাত ভাই অনেকক্ষন শাওনকে বুকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন । মুক্তিযোদ্ধাদের সবার স্নেহের এই শাওন । সবই নির্বাক-নিস্তব্ধ! এ প্রশ্নের উত্তর কারো জানা ছিল না । বনানী কবরস্থানে সদ্য দাফন করা মার কথা সবাই কিছুক্ষনের জন্য ভুলে গিয়েছিল ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : বাসার সবাই আমাকে মিষ্টি বলে ডাকে । এ নামটি শাওনের দেওয়া । এই মিষ্টি শাওনকে নিয়ে সাভার স্মৃতিসৌধে গিয়ে ফুল দিয়ে বলেছিল – এটাই তোমার বাবার কবর, যেখানে লাখো শহীদ ঘুমিয়ে আছে । আরেক দিন শহীদ মিনারে নিয়ে গিয়ে বলেছিল – প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারী লাখো-কোটি বাঙালি তোমার বাবাকে স্মরন করে শ্রদ্ধাবনত শিরে । বাঙালি জাতি এবং বাংলা ভাষা যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন তোমার বাবা আর বাঙালির গর্বের শহীদ আলতাফ মাহমুদ বেঁচে থাকবেন । শাওন এখন বড় হয়েছে, ওর সংসার হয়েছে । ওর বাবার কোন মৃত্যুদিন নেই, তাই বাবার ধরে নিয়ে যাওয়ার দিনটিকে ও শেষদিন মনে করে । ৩০ আগস্টকে শাওন ওর বাবার অন্তরর্ধান বা হারিয়ে যাওয়ার দিন হিসেবে পালন করে । বদরুল হাসানের লেখা আর ওর বাবার সুর করা একটা গান গেয়ে শ্রদ্ধা জানায় প্রতি বছর :
ঘুমের দেশে ঘুম ভাঙাতে
ঘুমিয়ে গেল যারা
জ্বলছে স্মৃতি আলোর বুকে
ভোরের করুন তারা………….