আজ ১৯৭১ আগস্ট ২৮
মেঝমনি(মিনু বিল্লাহ)আর মেঝদা(মেওয়া বিল্লাহ)ত্রিপুরা চলে গেল ভোরের আলো ফুটবার আগেই, শাহাদাত ভাই, আলম ভাই, ফতে আলীদের সাথে আগরতলার মেলাঘরে, মা আর চার ভাই ঝিনু মাহমুদ(বম্মা), শাওন, আমি, ভাইয়া রয়ে গেলাম, সেপ্টেম্বরের তিন তারিখ যাব আমরা, মা আমরা কেউ কাদঁছিনা কিন্তু অপার এক বিচ্ছেদের যন্ত্রনা আমাদের চোখে মুখে, সবার মনে একটা শুন্যতা কাজ করছিল, হয়তো ভেবেছিলাম এ জন্মে তোমরা এবং আমরা যদি বেঁচে থাকি তবে হয়তোবা দেখা হবে- নাও হতে পারে।
সেদিন ওরা চলে যাওয়ার পর ভাইয়ার মনের মাঝেও ঝড় বইছিল, সেই হাত কাটা সাদা স্যান্ডো গেঞ্জী আর চেক লুংগী পড়ে খাটে বসে রইলো দুপাশে দুই হাত দিয়ে, শরীরের ভার বহন করছে দুইহাত, ঝাকড়া চুলের মাথাটা নীচের দিকে নোয়ানো, চোখ দুটো মেঝের দিকে স্থির, হঠাৎ অলৌকিক মানসিক ক্ষমতার অধিকারি মানুষ মাথার ভেতরে জমানো চিন্তার আবর্জনা দূরে ঠেলে দিয়ে ঝট করে উঠে দাঁড়িয়ে মাত্র মামনি মামনি বলে মা কে ডাকতে লাগলেন, তাঁর ডাকাডাকিতে আমরা সবাই ছুটে গেলাম।
ততক্ষনে ভাইয়া আমাদের বাড়ির পিছনের উঠানে চলে গেছে, বেল গাছের দিকে তাকিয়ে আছে, এই সময়টায় বেল কাঁচা থাকে, তবে কি দেখছে ভাইয়া! বেল গাছের দিকে তাকিয়ে! হঠাৎ মাকে বললেন “মামনি চিনির শিড়া করে দেন,আমি কাঁচা বেলের মোড়ব্বা বানাব”
মায়ের চোখ মুখ থমথমে, তিনি যেনো আকাশ থেকে পড়লেন! “কাঁচা বেলের মোড়ব্বা! এখন বানাবা আলতু? মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যা বললেন, কাঁচা বেল পারা হলো, সেটা কাটার জন্য ছুড়ি, দা, বটি নিয়ে নিমগ্ন হয়ে গেল, এত শক্ত খোশা সেই বেল কী আর সহজে কাটে?
বুঝতে পারছিলাম মা এবং আমাদের মন খারাপ করা চেহারা গুলো ভাইয়াকে কষ্ট দিচ্ছিল। তাই বুকের ভাংগন রোধ করার জন্য এই অদ্ভুত কাজে আমাদের ব্যস্ত রাখার চেস্টা।
অনেক কষ্ট করে ছুরি দিয়ে খোশার ওপড় দাগ কেটে বটি দিয়ে দুভাগ করা হলো সব গুলো কে, আমাকে বলল “যা জলে লবন মিশিয়ে বড় গামলায় নিয়ে আয় নইলে কষ উঠবে বেলগুলো কালো হয়ে যাবে”, গুরু আদেশ করেছেন – আমাকে মান্য করতে হবে, গামলা ভরে লবন জল এনে দিলাম, এবার শুরু হলো শিল্পীর হাতের নিপুণ খেলা! আমাদের কাউকে ধরতে দিচ্ছেনা, পিঁড়ি পেতে পিছনের বারান্দায় বসে সে আপন মনে খেলে চলেছে, ধরতে গেলেই বলছে “তোরা পারবিনা সুন্দর করে ভেতর থেকে বেলটাকে বের করে আনতে, হাতটাত কেটে কেলেঙ্কারি করবি”, আহা ভাইয়া তোমার শরীরের কোনো জায়গায়ই তো ওরা অক্ষত রাখেনি!
কি সুন্দর করে খোশার ভেতর থেকে বেলের মূল অংশটাকে বের করে আনলো! তারপর গোল গোল চাক চাক করে টুকরো করা হলো, দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হয়েছে, এর মধ্যে দুপুরও গড়িয়েছে, তবুও তিনি ক্লান্তিহীন, বিরামহীন। সবগুলো কাটা শেষ করে মায়ের পাশে পিঁড়ি নিয়ে বসে পরলো, মায়ের চিনির শিরা প্রায় ঘন হয়ে এসেছে, আমি কিন্তু আছিই পিতাগুরুর পিছুপিছু হচ্ছেটা কি দেখার জন্য, “মামনি শিরার মদ্ধে দারচিনি, এলাচ আর তেজপাতা দিতে হবে”, দেয়া হলো, এবার কাঁচাবেল গুলো সিদ্ধ করতে হবে , সেটাও হলো, এখন চিনির শিরায় বেলগুলোকে দিয়ে ভাল করে জ্বাল দিতে হবে, যেন মিস্টিটা বেলের ভেতরে যায়, মা তাই করলেন, ভাইয়ার নির্দেশনা শুনে মনে হচ্ছিল মা কোনোদিন রান্না করেননি! মা কিচ্ছু জানেনা! লক্ষী মেয়ের মত মা ভাইয়ার সব নির্দেশনা পালন করে যাচ্ছেন, কি অপূর্ব দৃশ্য!!!
আমরা কোনদিন কাঁচাবেলের মোড়ব্বা খাইনি, কেউ বানিয়েছে এমনও দেখেনি তাই বিপুল আগ্রহ ও কৌতূহল নিয়ে চুলার পাড় ঘিড়ে দাঁড়িয়ে আছি, দুপুরের রান্না, মোড়ব্বা দুটো সামলাতে গিয়ে ঘেমেনেয়ে অস্থির, দরদর করে ঘামছেন মা, “মামনি আপনার গরম লাগছে না? এই শিমূল যা ঘর থেকে মামনির হাতপাখাটা নিয়ে আয়”, আমি দৌড়ে গিয়ে মায়ের ঘর থেকে পাখা এনে দিলাম ভাইয়ার হাতে, সেটা দিয়ে এমন জোরে মাকে বাতাস করতে লাগলেন ভাইয়া যে তাতে চুলার আগুনই প্রায় নিভে যায়, মা যতই বলেন “আলতু বাতাস করতে হবেনা আমার গরম লাগছেনা, ভাইয়া আরো দিগুণ বেগে বাতাস করে যাচ্ছেন, কি অপূর্ব দৃশ্য! দুধেআলতা রঙ মায়ের লাল হয়ে গেছে, আচ্ছা ভাইয়া তোমার শরীরে ওরা যখন গরমপানি ঢালতো সেই গরম কে তুমি কোন মন্ত্রে, কোন ঐশ্বরিক ক্ষমতায় সহ্য করতে! সেই মন্ত্রটাতো আমাকে শিখিয়ে গেলেনা, না শিখিয়ে ভালই করেছ, আচ্ছা তুমি কি বুঝে গিয়েছিলে যে-সেই মন্ত্রের যথাযোগ্য মর্যাদা এই কুষ্ঠরোগগ্রস্ত জাতি দিতে পারবেনা।
ঘন শিরার মাঝে কাঁচা বেল গুলো তার নিজস্ব রঙ হারিয়ে খয়েরিও না হলুদও না কেমন মিস্টি একটা রঙ ধারণ করেছে,”ঝিনু একটা ডিশ আনোতো, ডিশে ঢেলে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রাখবো, সবাই মিলে বিকেলে চেখে দেখবো কেমন হয়েছে, ভাইয়া কিন্তু নামানোর আগেই চেখে দেখে নিয়েছে মিস্টি ঠিক আছে কিনা,”হ্যা মামনি সব একদম পরিমাণ মত হয়েছ”, মনে মনে হাসি আমি, যার হাতের রান্না ছাড়া মুখে খাবার রুচেনা তাঁকেই বলছে সব ঠিক আছে!
আচ্ছা ভাইয়া মা আমাদের সবাই কে ছেড়ে তোমাকে এত বেশি ভালবাসত কেনো? তোমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর মা সেই ট্রাক আর সাদা টয়োটার পিছন পিছন দৌড়ে রাস্তায় চলে গিয়েছিলো, ফিরে এসে বারবার এক কথাই বলছিল “ওরা আলতু কে ছাড়বেনা” কেনো? তবে কি মায়ের মন যা বলে তাই ফলে!
নিজের হাতে একটা একটা করে মোড়ব্বা সাজিয়ে ডিশে রেখে তার উপরে যে টুকু শিরা বাকি ছিল তা ঢেলে দিল, “এবার ফ্যানের নিচে রেখে দাও ঝিনু ঠান্ডা হোক”
ভাইয়া তোমাকে তো ওরা ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখতো ঘন্টার পর ঘন্টা মাথা নিচে পা উপরে, সেই অবস্থায় আসা যাওয়ার পথে সিগারেট নিভাতো তোমার শরীরে, দ্রুতগতিতে ফ্যান ছেড়ে দিত, আবার মাঝে মাঝে ঔভাবে রেখেই গরম পানিঢেলে দিত, আবার কখনো গরম পানি নিচে রেখে পায়ের রশি ঢিলে করে শুধু মাথার তালুটা চুবিয়ে রাখতো, সেই তাপের অসহ্য যন্ত্রণা কেমন ভাইয়া? কি করে এই অসীম ধৈর্য্য সহ্য ক্ষমতা অর্জন করেছিলে! শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম বললে তোমাকে ছেড়ে দিবে বলেছিল ওরা, কিন্তু তুমি ওদের বিশ্বাস করোনি, আর এখন অনেকেই কি অবলীলায় অস্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের! তোমাদের মত শারীরিক যন্ত্রনা সইতে হলে কি করতো এই প্রজন্ম?
দুপুরের খাবার দেয়া হয়েছে টেবিলে, মা বললেন” আমার খেতে ইচ্ছা করছেনা, তোমরা খেয়ে নাও, স্নান শেষ করে ভাইয়া এই কথা শোনা মাত্রই গোঁ ধরে বসলেন “আপনি না খেলে আমরা কেউ খাবনা”, জেদি ভাইয়ার সাথে পেরেউঠা সম্ভব নয়, অগত্যা মা খেতে বসলেন, তবে গলা দিয়ে খাবার নামছিল না, খেতে বসে সবার মন খারাপ, আহা মিনু, মেওয়া আর সবাই নাজানি কতদূর যেতে পেরেছে, কি দিয়ে কি খাচ্ছে খোদাই জানে।
মা অল্প খেয়েই উঠে গেলেন, আঁকড়ে ধরলেন জায়নামাজ আর কোরান শরিফ, সেদিন ভাইয়া আর বাসা থেকে বের হলেন না, শাওনকে বুকে নিয়ে ঘুমালেন।
আজ ২৯ তারিখ, ভাইয়া একবার বাইরে গেলেন, ফিরে আসলেন যখন তখন বেশ চিন্তিত মনে হলো, হয়তো চিন্তিত হয়তোবা আমার বোঝার ভুলও হতে পারে।
আচ্ছা শাওন কি খেয়েছিল ওর বাবার হাতের তৈরি শেষ খাবার? আজ আর স্বরণ করতে পারছিনা, কারন আগামীকাল ভোরে আমাদের জীবনে যে বিভৎষ ঘটনা ঘটবে তার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। এই রাতে যে কি ভয়ংকর ঘটনা ঘটে যাচ্ছে সেটাও জানতাম না, রাতেই পাকিস্তানি আর্মীরা ধরে নিয়ে গেছে আজাদ, রূমী, বদী, বকর, জুয়েল, হাফিজ, আব্দুস সামাদ, চুল্লুভাই সহ আরো অনেক কেই। ভোর বেলা কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাড়ির পিছনের দরজা ভেঙে হুরমুড় করে ঘরের ভিতর ঢুকে পরলো পাকিস্তানি আর্মীরা, জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি সারা বাড়িটা ঘিরে ফেলেছে, ট্রাক ভর্তি আর্মী, মা ভোরের নামাজ পরে কোরান শরিফ পরছিলেন মৃদুস্বরে, হঠাৎ দরজা ভাংগার শব্দ এবং আর্মীদের চিৎকারে হতভম্ব হয়ে কি করবেন বুঝতে পারছিলেন না, তিনি তাঁর বিশ্বাসে হাত রাখলেন বুকে টেনে নিলেন কোরান শরিফ। আর্মীরা ভাইয়ার নাম ধরে চিৎকার করছে আর বলছে “আলতাফ মাহমুদ কৌন হ্যেয়” ভাইয়ার পরনে সেই চেক লুংগী আর সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি, ঝিনু আপা ভিষণ ভয় পেয়ে ভাইয়াকে পিছন থেকে টেনে ধরেছিল, ভাইয়া ঘুরে শুধু বলেছে “এত ভয় পাচ্ছো ক্যানো”! এটাই শেষ কথা ঝিনু আপার সাথে, শোবার ঘরের দরজা খুলেই ভাইয়া স্পষ্ট ভাষায় বললো “আমিই আলতাফ মাহমুদ”, আর তখনই চার দিক থেকে ঘিরে, বন্দুকের কাঠের অংশ দিয়ে মারতে মারতে সামনের উঠানে নিয়ে গেল, ততক্ষণে বসার ঘর থেকে বের করে নিয়েছে চারভাই সহ আলভী মামাকে, দোতলা থেকে, পাশের বাসা থেকে ধরে আনলো আরও চার পাঁচজন, শাওন হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠে পরেছে, প্রচন্ড শব্দ করছিলো ওরা, ভয়ে অনবরত বমি করছে শাওন। এই প্রথম খেয়াল করলাম পাকিস্তানি আর্মীদের সাথে আব্দুস সামাদ! সেও রাতেই ধরা পরেছিল, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অনেকের নাম বলে দিয়েছে, অন্যান্য বাড়ি শনাক্ত করার সময় তার মুখ ঢাকা ছিল তাই সামাদকে চিনতে পারেনি, আমাদের বাড়িটা ছিল শেষ বাড়ি, ভাইয়া কে সবার শেষে ধরেছিল, তাই এখানে তার মুখ খোলা ছিল, সামাদ আঙ্গুল দিয়ে ভাইয়া কে দেখিয়ে নিশ্চিত করলো ইনিই আলতাফ মাহমুদ।
আজ ৩০ আগস্ট ১৯৭১ আমার সাতভাই চম্পার চিরদিনে জন্য হারিয়ে যাওয়ার দিন
পাকিস্তানি আর্মির দানবীয় অত্যাচারে সামাদ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল যে আলতাফ মাহমুদের কাছে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র রেখে গেছে পরবর্তী আক্রমনের জন্য, যেদিন অস্ত্রগুলো গোপন জায়গায় লুকিয়েছিল সেদিন সামাদ এবং মেঝদাও সাথে ছিল আর ছিল আমাদের বাড়িওয়ালার ছেলে ইকুমামা, পাশের বাড়ির পিছনের উঠানে লেবু গাছের নিচে মাটির নিচে দুই ট্রাংক অস্ত্র গোলা বারুদে ঠাসা ।
সবাইকে লাইন ধরে দাঁড় করিয়েছে, এক্ষুনি গুলি করে মেরে ফেলবে, মা কলেমা পরছে, আমি জানলা দিয়ে লুকিয়ে দেখছি, শাওন বমি করেই যাচ্ছে, ঝিনু আপা ওকে নিয়েই ব্যস্ত, এক থেকে সাত গুনলো, দশের মধ্যে না বললে গুলি চালাবে, কোনো এক ফাঁকে ভাইয়া বিয়ের আংটিটা খুলে খনুর হাতে দিয়ে বলেছে মাকে দিতে, ভাইয়া ধীরে হাঁটা শুরু করলেন, আর সবাইকে ট্রাকে নিয়ে ভরলো মারতে মারতে, সামনের উঠান ঘুরে পিছনের বাড়ির লেবু তলায় গিয়ে দাঁড়ালেন, সামাদ জায়গাটা চিহ্নিত করলো।
সেই ভোরে ১৪ বছরের আমি ঝড়ের তান্ডবে ৪০ হয়ে গেলাম! ভাইয়ার হাতে কোদাল, মাটি খুঁড়ছে, দেরি হলেই বুটের লাথি কোমড়ে, বেয়নেটের খোঁচা কপালে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে, পাশের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে সব দেখলাম কি করে সুরের এক অনির্বাণ শিখা কে স্তব্ধ করে দিচ্ছে পাকিস্তানি সৈন্যরা, ট্রাংক দুটো দড়ি দিয়ে টেনে টেনে উঠালো ভাইয়া একা, এবার হাতদুটো সেই দড়ি দিয়েই পিছন দিকে বাঁধলো, এবার যাবার পালা, নিয়ে যাচ্ছে ভাইয়াকে আমার চোখের সামনে দিয়ে, রক্তাক্ত মুখ, হঠাৎ আমাকে দেখে দাঁড়ালেন, কয়েক মুহূর্তর জন্য, কি বলতে চেয়েছিলেন ভাইয়া? জানিনা, আর কোনদিন জানা হবেওনা,
চলে যাচ্ছে ভাইয়া, পিছনে ফেলে যাচ্ছে প্রিয়তমা স্ত্রী, বুকের মানিক, মমতাময়ী মামনি, কন্যাস্নেহতুল্য শিমূলকে ফেলে, কোন অন্ধকার গহ্বরে আমাদের নিমজ্জিত করে গেলে তুমি জানতেও পারলেনা! যাবার আগে ফিরিয়ে দিলে বাদবাকি আর সবার জীবন, তোমার জীবনের অসমাপ্ত আয়ূ ধার করে আমরা বেঁচে আছি, বেঁচে আছি এই দিন দেখবার জন্য, তোমাকে যে ভাবে অপমান, নির্যাতন করেছিল সেই একই আগুনে দগ্ধ হচ্ছি আমরা প্রতিনিয়ত।
কাঁচা বেলের মোড়ব্বা সেদিন আমরা সবাই মিলে খেয়েছিলাম, ভিষন স্বাদু হয়েছিল, বাকিটা মা ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলেন, ভাইয়েরা এক তারিখ ছাড়া পেয়েছে, ছাড়া পেয়েছে বাকি সবাই, শুধু তুমি র’য়ে গেছ।
মা পাগলের মত যে যা করতে বলছে তাই করছে, দিনের পর দিন ক্যান্টনমেন্টের গেটে সকাল থেকে সন্ধ্যে দাঁড়িয়ে থেকেছে, কে নাকি বলেছে ভাইয়াকে ক্যান্টনমেন্টে দেখা গেছে, আবার কেউ বলেছে জেল হাসপাতালে আছে, সেখানেও দাঁড়িয়ে থেকেছে, ভাইদের শারীরিক অবস্থা ভাল নেই, নির্যাতনের কারনে হাত দিয়ে খেতেও পারে না, খাইয়ে দিতে হয়, শাওন স্তব্ধ হয়ে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু বাবার কথা কাউকে জিজ্ঞেস করছেনা! সেই যে চুপ হলো হলোই, আর কোনদিন মুখ খোলেনি, ওই বয়সে ও বুঝে গিয়েছিল ১৯৭১ এ বাবার নাম মুখে আনা নিষিদ্ধ, আজ আর ঝিনু আপার কথা নাইবা বললাম,সোনার বরণ পুতুলটা ছাই বরণ হয়ে গেছে।
কিছুদিন পর কোন এক কারনে ফ্রিজ খুলে নিথর হয়ে গেলাম, সেই কাঁচা বেলের মোড়ব্বার রঙ মলিন হয়ে গেছে, গোল গোল চাকগুলোকে চারপাশ থেকে কালো
পিঁপড়েরা ঘিরে ধরেছে, যেমন করে ভাইয়াকে ঘিরে ধরেছিল পাকিস্তানি সৈন্যরা –