আমার জীবনের প্রথম দু’দশক কেটে গেছে আমার বাবা আলতাফ মাহমুদের সুরের মূর্ছনায়। আর তাঁর জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায়। তারপরের দু’দশক কাটিয়েছি বাবার ’৫২ থেকে ’৭১ এর মেলবন্ধনের মাঝখানে। এখন কাটাচ্ছি বাবা কী করে শিল্পকে বিপ্লবে রূপান্তরিত করেছিল সেই ইতিহাস গাঁথার মালা নিয়ে। বাবার জীবনের প্রথম আন্দোলন মাত্র ১৫ বছর বয়সে। তাই কখনও মনে হয় আমার বাবা আলতাফ একটি বিপ্লবের নাম। একজন বিপ্লবী সন্তান। যিনি মাত্র ২১ বছর বয়সে একুশের গানের সুরারোপ করেছিল। সে সুরে ছিল শোক, ঘৃণা আর প্রতিরোধের ভাষা। তিনি থেমে থাকেননি কখনও। তাঁর সুরে প্রেম ছিল, মায়া ছিল, মোহ ছিল, ছিল মানুষের ভাষা, প্রতিবাদের ভাষা। তিনি হেঁটে বেড়িয়েছেন বাংলাদেশের মাঠে, প্রান্তরে গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে। কখনও শহীদ মিনার, কখনও বাংলা একাডেমি অথবা রাজপথে, তার এই দীর্ঘ বিপ্লবের পথে যখন আমি হাঁটতে থাকি তখন মনে হয় আলতাফকে চিনতে হলে আগে মানুষের কথা জানতে হবে, প্রতিবাদের ভাষায় কথা বলতে হবে আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের হাতিয়ার তৈরি করতে হবে। হোক না তা সুরের মাঝে অথবা কলমের কালির মাঝে। যে যার স্থানে অবস্থান করেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে, এটা আমি তাঁর নির্দেশিত পথে চলতে চলতে শিখেছি। আমি বিশ্বাস করি, দেশে দেশে যুগে যুগে আলতাফ ফিরে আসে মানুষের জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। আলতাফের মাত্র ৩৮ বছরের জীবনে প্রতিবাদের ভাষা আমাকে এখনও ভাবতে বাধ্য করে যে, একটা মানুষ কতটুকু সাহসী হলে বীরের মতো নিজের জীবন উৎসর্গ করতে পারেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য, মানুষের জন্য, বাংলাদেশের জন্য।