সেই সময়ের আমরা – সালাউদ্দিন জাকী

প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার শিল্পী আলতাফ মাহমুদ। আত্মপ্রত্যয়ী। কন্যা শাওন মাহমুদ । শাওন বাবাকে পায়নি, “প্রত্যয়” কে পেয়েছে। আমি সেই পরিবারের একজন। যুদ্ধ শেষে জানুয়ারী ’৭২ বিধ্বস্ত শহীদ মিনারে আমরাই করেছিলাম প্রথম অনুষ্ঠান “সেই সব নাম ছুঁয়ে হাঁটছি“। জানুয়ারী ১৫ বা ১৬, ১৯৭২।আলতাফ ভাইকে উৎসর্গ করে করেছিলাম। শ্রদ্ধেয় সত্য সাহা সুর করেছিলেন কবিতার গান। শাওন চার বছরের!
আলতাফ ভাইয়ের স্মরণে গানের স্কুল হয়েছে পরে—পরিবারের উদ্যোগে। আমি চলে গেলাম পুনে ফিল্ম ইন্সটিটিউট ৭৩ সালে। মাঝে এসে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমি আর বাদল রহমান হাতে নিলাম “প্রত্যাশা সূর্য্য” (The Note of Morrow) নাম দিয়ে বাংলাদেশের উপর প্রথম ডকুমেন্টারি। কাজল (ইব্রাহীম) , মিনু বিল্লাহ ( শাওনের খালা ) আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানের নৃত্যনাট্য কম্পোজ করলো, আমরা চিত্রায়ন করলাম ।
ডকুড্রামায় থাকতেই হবে আলতাফ ভাই স্মরণের এই স্কুল। ঝিনুপাকে বললাম। যাক। সুপ্রিয় পরম শ্রদ্ধেয় গণসঙ্গীত গুরু শেখ লুৎফর রহমান ভাই স্কুলে গান শেখান, শিশুদের। শাওন তখন ছোট্ট পাখি, ফুলের মতো। লুৎফর ভাই অভিনয় করে গেয়ে শেখালেনঃ “এক দুই তিন এক দুই তিন এলো লাল টুকটুকে উজ্জ্বল দিন”। শাওন তার সাথিদের নিয়ে নাচলো।
ভারতের পুনে ফিল্ম ইন্সটিটিউট থেকে পুরোপুরি ফিরলাম, ১৯৭৬ সালে। হাতে নিলাম ডকুড্রামা অংকুর, বাংলাদেশের প্রথম ডকুড্রামা । অভিনয় করলেন ফেরদৌসী রহমান, মুস্তফা মনোয়ার, গোলাম মুস্তফা—!প্রধান চরিত্রে সাজিয়া আফ্রিন। নতুন কুঁড়ির প্রখ্যাত শিল্পী! আলতাফ ভাইয়ের স্কুলের কিছু শটস ব্যবহার করেছিলাম, মনে পড়ে। আমার অফিস তখন ঝিনু আপার গ্যারাজে, মানে স্কুলের ভেতর। গল্পদাদু, শিমূল (শাওনের খালা) অভিনয় করলো , গাইলো “গল্পদাদুর দেশে এলেম আমি ভেসে”, আলাউদ্দীন আলীর সুরে।
সেই শাওন আজ ফুলের জগত নিয়ে আছে। আলতাফ ভাই কি ফুল হয়ে থাকে তার কাছে?