১৯৩৩ : ২৩ ডিসেম্বরে বরিশালের মুলাদী থানার পাতারচর গ্রামে জন্ম।
১৯৩৮ : স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মধ্য দিয়ে শিক্ষাজীবন শুরু।
১৯৪৩ : বরিশাল জিলা স্কুলে ভর্তি।
১৯৪৫-৪৬ : বরিশাল ফকিরবাড়ি সড়কে ‘তরুণ মহফিল’ নামে সমাজকল্যাণ সংস্থার সাথে জড়িত হয়ে পাঠাগার গড়া।
১৯৪৭ : ১৩ আগস্ট, রাত ১২টা ১ মিনিটে স্থানীয় ‘তরুণ মাহফিল’-এর পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ‘পাকিস্তান বরণ’।
১৯৪৮ : বরিশাল জিলা স্কুল থেকে কোলকাতা বোর্ডের পরীক্ষা এন্ট্রান্স (এসএসসি) পাস ও ব্রজমোহন কলেজে ইন্টারমিডিয়েট (এইচএসসি)-এ ভর্তি।
১৯৪৯ : পণ্ডিত সুরেন রায়ের কাছে বেহালায় হাতেখড়ি এবং কোলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি ও রাজনীতি সচেতন হওয়া। বরিশাল অশ্বিনি কুমার টাউন হলে কৃষকদের জনসভায় গণনাট্য সংঘের বিখ্যাত গান ‘ম্যায় ভুখা হুঁ’ পরিবেশন।
১৯৫০ : বরিশাল থেকে ঢাকায় আগমন। প্রগতিশীল সংগঠন ‘ধূমকেতু শিল্পী সংঘ’তে যোগদান।
১৯৫২ : মোশাররফ উদ্দীন রচিত ‘মৃত্যুকে যারা তুচ্ছ করিল ভাষা বাঁচাবার তরে’ গানটির সুরারোপ। বরিশাল ‘শিল্পী সংসদ’ প্রতিষ্ঠা এবং সে বছর তার কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য নূর আহম্মেদ রচিত ‘আগামী দিন’ ও তারাশংকরের ‘দুই পুরুষ’ নাটকে সংগীত পরিচালনা ও নেপথ্য কণ্ঠদান।
১৯৫৩ : প্রখ্যাত সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী’তে দ্বিতীয় সুরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন ও স্থায়িত্ব লাভ। কুমিল্লা সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনে ‘পূর্ব পাকিস্তান শিল্পী সংসদ’ প্রযোজিত নৃত্যনাট্য ‘কিষাণের কাহিনী’ ও ‘মজদুর’-এর সংগীত পরিচালনা।
১৯৫৪ : যুক্তফ্রন্টের সাধারণ নির্বাচনে বরিশালের মঠবাড়িয়া ও সমগ্র বরিশাল জেলায় নির্বাচনী প্রচার । সে সময় তাঁর গাওয়া গানগুলোর মধ্যে দু’টি বিখ্যাত গান ‘মোরা কি দুঃখে বাঁচিয়া রবো’ ও ‘মন্ত্রী হওয়া কি মুখের কথা’।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর নির্দেশে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা ভেঙে দেওয়া এবং ’৯২-এর ‘ক’ ধারা জারি । আলতাফ মাহমুদ ও নিজামুল হকের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি।
আরমানিটোলা মাঠে ‘পূর্ব পাকিস্তান শিল্পী সংসদ’-এর গীতিনাট্য অভিনীত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,অলি আহম্মদ,কমরেড তয়াহা ও আতাউর রহমান খানের অভিনয়ে অংশগ্রহণ এবং আলতাফ মাহমুদের লেখা গান পরিবেশন। এবং ‘পাকিস্তান গণনাট্য সংঘ’ গঠন।
১৯৫৫ : ‘শিল্পী’ শীর্ষক ছায়ানাট্যের সংগীত পরিচালনা। নিজামুল হক পরিচালিত এ ছায়ানাট্যে গাজীউল হক ধারাভাষ্যকারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ভৈরবে জিল্লুর রহমানের আহ্বানে ও ব্যবস্থাপনায় ‘মেঘনার কূলে ছিল আমার ঘর/হঠাৎ একটা তুফান আইয়া/ভাইসা নিল তারে’ গানটি অনুরোধে বারবার পরিবেশন। এ বছরের শেষে ঢাকা থেকে ভিয়েনার উদ্দেশে করাচি যাত্রা। এক অজ্ঞাত ষড়যন্ত্রে তাঁর পাসপোর্ট বাতিল। মানসিক আঘাত পেয়ে করাচিতে অবস্থান।
১৯৫৮ : করাচিতে প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড। গীতিকার ও সুরকার নিজেই। ‘পালের নৌকা পাল উড়াইয়া যায়’ ও ‘কন্যা আর যাইও না ওই না ঘাটেতে’। দ্বিতীয় রেকর্ড- দ্বৈত কণ্ঠে জাহানারা লাইজুর সঙ্গে ‘জাল ছাড়িয়া দেরে জাইলা কাছি তুইলা দে’ এবং অপর পিঠে ‘হাতে মেন্দি ঝকমক’ ও ‘কানে ঝুমকার ফুল’ এ গান দু’টির সুরকার গীতিকার নিজামুল হক।
১৯৫৯ : ‘বরিশাল শিল্পী সংসদ’ কর্তৃক অভিনীত বরিশাল টাউন হলে আব্দুল মালেক খান পরিচালিত ‘মায়ামৃগ’ নাটকে সংগীত পরিচালনা, নেপথ্যে কাজী নজরুল ইসলামের ‘যখন আমার গান ফুরাবে’ গানটি স্বসুরে গীত । আবার বরিশাল থেকে ঢাকা ফেরা।
১৯৬১ : বরিশাল থেকে পুনরায় করাচি ফিরে যাওয়া।
১৯৬৩ : করাচি থেকে ঢাকা ফেরা।
১৯৬৪ : বেবী ইসলাম পরিচালিত ‘তানহা’তে উর্দু গানে কণ্ঠদান, নেপথ্য গান ‘ও রাহি নাদান’।
১৯৬৫ : দেবু ভট্টাচার্যের শিষ্যত্ব গ্রহণ। পুনরায় বন্ধু নিজামুল হকের সাহচর্য লাভ। ওস্তাদ কাদের খাঁর কাছে নাড়া বেঁধে উচ্চাঙ্গসংগীতে তালিম গ্রহণ। এরপর ওস্তাদ রমজান আলী খাঁ,ওস্তাদ জিরে খাঁ,সেতারিয়া কবির খাঁ,বীনকার ফকির হাবিব আলী খাঁ,ওস্তাদ ওমরাও বন্ধু খাঁ,তবলা নেওয়াজ আল্লাদিত্তা খাঁ’র স্নেহ ও ভালোবাসা লাভ।
অন্যান্য বাঙালি শিল্পী শেখ লুৎফুর রহমান,আফরোজা বুলবুল,সংগীত পরিচালক আলী হোসেন,নৃত্য শিল্পী আমানুল হক-সহ অনেককেই সঙ্গী হিসাবে পাওয়া। করাচি বেতারে প্রথম সংগীত পরিবেশন, গানের কথা- ‘জীবনের মধুমাস মোর দুয়ারে আজ কি কথা বলে যায়’, রচনা কশব চ্যাটার্জি। বেতারে ‘ইত্তেহাদে মুসিকি’ নামে ১০ মিনিটের একটি অনুষ্ঠান প্রযোজনা,চয়ন গ্রন্থনা,সুরারোপ ও পরিচালনা। এ জে কাদের পরিচালিত ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ ছবিতে ‘হাম হায় নাদিকা রাহা’য় কণ্ঠদান। সাদেক খান পরিচালিত উর্দু ছবি ‘ক্যায়সা কাহু’র সংগীত পরিচালনা।
১৯৬৬ : নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘কার বউ’ ও ‘আপন দুলাল’ সফদর আলী ভুইয়া পরিচালিত ‘রহিম বাদশা ও রূপবান’,জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’ ছবির সংগীত পরিচালনা। ১৬ অক্টোবর মেহতের বিল্লাহ’র মেয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী সারা বিল্লাহ ঝিনু’র সঙ্গে সুফিয়া কামালের মধ্যস্থতায় বিয়ে।
১৯৬৭ : আমজাদ হোসেন ও নূরুল হক বাচ্চু’র পরিচালনায় ‘আগুন নিয়ে খেলা’ ছবির সংগীত পরিচালনা। কাজী জহিরের পরিচালনায় ‘নয়ন তারা’ ছবির সংগীত পরিচালনা।
১৯৬৮ : আমজাদ হোসেন ও নূরুল হক বাচ্চু’র পরিচালনায় ‘দুই ভাই’, সিনে ওয়ার্কশপ গোষ্ঠী পরিচালিত ‘সংসার’, নূরুল হক বাচ্চুর পরিচালিত ‘কুচবরণ কন্যা’ (কণ্ঠসহ), রহিম নেওয়াজ পরিচালিত ‘সুয়োরানী দুওরানী’ (শাহানাজের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে) এবং কারিগর পরিচালিত ‘সপ্তডিঙ্গা’ ছবির সংগীত পরিচালনা । সত্য সাহা পরিচালিত ‘বাঁশরী’ ছবিতে কণ্ঠদান।
৬ আগস্ট একমাত্র কন্যা শাওনের জন্ম।
১৯৬৯ : ‘বিক্ষুব্ধ শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে রাজপথে আন্দোলন।
১৯৭০ : বাবু চৌধুরী পরিচালিত ‘আঁকাবাঁকা’তে (কণ্ঠ ও অভিনয়সহ),মোস্তফা মেহমুদ পরিচালিত ‘আদর্শ ছাপাখানা’, কারিগর পরিচালিত ‘মিশর কুমারী’, নবায়ন চৌধুরী মিতা পরিচালিত ‘ক খ গ ঘ ঙ’ (কণ্ঠ ও অভিনয়সহ)-এর সংগীত পরিচালনা। ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের পর তার লেখা ও সুর করা গান ‘এ ঝঞ্ঝা মোরা রুখবো’ গেয়ে সারা বাংলার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন।
১৯৭১ : মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে ঢাকা ক্র্যাক প্লাটুনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। গান রেকর্ড করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রেরণ। ৩৭০ আউটার সার্কুলার রোডে তাঁর বাসাটি সেই সময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।
৩০ আগস্ট তাঁর বাসা থেকে অনেকের সঙ্গে হানাদার পাক বাহিনী তাঁকে ধরে নিয়ে যায়,১লা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি বেঁচে ছিলেন জানা যায় । এরপর তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।